আজকের ডিজিটাল যুগে ঘরে বসে বা যে কোনো স্থানে একাউন্ট খুলে সহজে টাকা ইনকাম করা সম্ভব। ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইন মার্কেটপ্লেস, গেমিং, স্টক ট্রেডিং, বা ডিজিটাল সার্ভিসের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে আয় করা যায়।এই আর্টিকেলে আমরা এমন ২৯টি সেরা এবং প্রমাণিত উপায় তুলে ধরব, যেগুলো ব্যবহার করে আপনি সহজে আয় শুরু করতে পারবেন। প্রতিটি পদ্ধতি নির্ভরযোগ্য, ব্যবহার সহজ, এবং অনেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ছাড়াই ইনকাম করার সুযোগ দেয়।
সেরা ২৯টি উপায় একাউন্ট খুলে টাকা ইনকাম?
নিচে সেরা ২৯টি উপায় একাউন্ট খুলে টাকা ইনকাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
১. Printify – প্রিন্ট অন ডিমান্ড (Print on Demand) ব্যবসা
Printify হলো একটি জনপ্রিয় Print-on-Demand প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আপনি নিজের ডিজাইন করা পণ্য (যেমন: টি-শার্ট, মগ, ব্যাগ, ফোন কভার ইত্যাদি) অনলাইনে বিক্রি করতে পারবেন।
সবচেয়ে ভালো দিক হলো এখানে আপনাকে কোনো স্টক রাখতে হবে না, প্রিন্ট বা ডেলিভারির ঝামেলা নেই। শুধু একটি ফ্রি একাউন্ট খুলে আপনার ডিজাইন আপলোড করুন, তারপর সেটি অনলাইনে মার্কেটপ্লেসে লিস্ট করুন।
যখনই কোনো ক্রেতা অর্ডার করবে, Printify সেই অর্ডার প্রিন্ট করে ক্রেতার কাছে পাঠিয়ে দেবে এবং আপনি লাভ হিসেবে টাকা পাবেন। এটি দীর্ঘমেয়াদি প্যাসিভ ইনকামের অন্যতম সেরা উপায়।
২. Upwork – ফ্রিল্যান্সারদের গ্লোবাল মার্কেটপ্লেস
Upwork হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোর একটি, যেখানে বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টরা কাজ দিয়ে থাকে। আপনি যদি লেখালিখি, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডেটা এন্ট্রি, ডিজিটাল মার্কেটিং
বা অন্য কোনো স্কিল জানেন, তাহলে এখানে একটি প্রফেশনাল প্রোফাইল খুলতে হবে। প্রোফাইল আকর্ষণীয় হলে আপনি ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজ পাবেন এবং কাজ শেষ হলে ডলার আকারে টাকা পাবেন।
পরে এই টাকা Payoneer, PayPal (বাংলাদেশে সরাসরি নেই), বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে তুলতে পারবেন। Upwork বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ইনকাম সোর্স।
৩. TaskRabbit – ছোট কাজ করে আয়
TaskRabbit মূলত ইউএসএ, ইউকে এবং কিছু ইউরোপীয় দেশে জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম। এখানে মানুষ ছোটখাটো কাজ যেমন আসবাবপত্র জোড়া লাগানো, মেরামত, ডেলিভারি, বাজার করা, বা ঘরের কাজের জন্য হেল্পার খোঁজে।
আপনি যদি সেই দেশে থাকেন, তাহলে TaskRabbit এ একাউন্ট খুলে এই ধরনের টাস্ক সম্পন্ন করে ভালো ইনকাম করতে পারবেন। যদিও বাংলাদেশ থেকে সরাসরি এই সাইটে কাজ পাওয়া যায় না, কিন্তু বিদেশে যারা থাকেন তাদের জন্য এটি দারুণ একটি লোকাল ইনকামের উপায়।
৪. Shutterstock – ছবি ও ভিডিও বিক্রি করে আয়
Shutterstock হলো একটি স্টক ফটো ও ভিডিও বিক্রির প্ল্যাটফর্ম। আপনি যদি ভালো ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি বা গ্রাফিক ডিজাইন করতে পারেন, তাহলে আপনার কাজগুলো এখানে আপলোড করতে পারবেন। যখনই কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি আপনার ছবি বা ভিডিও কিনবে, আপনি রয়্যালটি হিসেবে টাকা পাবেন।
এভাবে Shutterstock আপনাকে প্যাসিভ ইনকাম করার সুযোগ দেয়, কারণ একবার ছবি আপলোড করলে সেটি বারবার বিক্রি হতে পারে।
৫. Swagbucks – সার্ভে ও ছোট কাজ করে ইনকাম
Swagbucks হলো একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেখানে ভিডিও দেখা, সার্ভে পূরণ করা, গেম খেলা বা ছোট কাজ করে ইনকাম করা যায়। কাজগুলো তুলনামূলক সহজ এবং যে কেউ করতে পারে।
কাজ শেষ হলে আপনি “SB পয়েন্ট” পাবেন, যা পরে PayPal ক্যাশ বা গিফট কার্ডে রূপান্তর করা যায়। যদিও বড় ইনকামের জন্য উপযুক্ত নয়, তবে খালি সময়ে সামান্য ইনকাম করার জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য সাইট।
৬. Rover – পোষা প্রাণী দেখাশোনা ও ডগ ওয়াকিং করে আয়
Rover হলো একটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম যেখানে মানুষ তাদের পোষা প্রাণীর (কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি) জন্য পেট সিটার বা ডগ ওয়াকার খোঁজে।
আপনি যদি প্রাণী ভালোবাসেন এবং তাদের যত্ন নিতে পারেন, তাহলে Rover এ একাউন্ট খুলে এই কাজ করতে পারবেন। প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা সময় দিয়ে কুকুর হাঁটানো, খাওয়ানো বা কিছু সময় খেলার মাধ্যমে আয় করা সম্ভব।
এটি মূলত বিদেশে বসবাসকারীদের জন্য বেশি কার্যকর, তবে বাংলাদেশ থেকেও কিছু ক্ষেত্রে অনলাইনে পেট কেয়ার সম্পর্কিত কনসাল্টিং বা বুকিং সার্ভিস দিয়ে ইনকাম করা যায়।
৭. Studypool – পড়াশোনার নোট বিক্রি ও প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আয়
Studypool একটি শিক্ষাবিষয়ক মার্কেটপ্লেস যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনার নোট বিক্রি করতে পারে অথবা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ইনকাম করতে পারে।
আপনি যদি কোনো বিষয়ে দক্ষ হন (যেমন গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজি বা বিজনেস স্টাডিজ), তাহলে Studypool এ একাউন্ট খুলে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে টাকা আয় করতে পারবেন।
এছাড়া আপনার নিজের লেখা নোট বা স্টাডি ম্যাটেরিয়ালও বিক্রি করতে পারবেন। এটি বিশেষ করে ছাত্রছাত্রী ও টিউটরদের জন্য একটি ভালো সাইড ইনকামের উৎস।
৮. ClearVoice – কনটেন্ট রাইটার ও ক্রিয়েটরদের জন্য মার্কেটপ্লেস
ClearVoice হলো একটি ফ্রিল্যান্স কনটেন্ট মার্কেটপ্লেস, যেখানে লেখক, কপিরাইটার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, এবং মার্কেটাররা কাজ পায়। এখানে একাউন্ট খুলে আপনি নিজের লেখালিখির পোর্টফোলিও তৈরি করতে পারবেন।
কোম্পানি ও ব্র্যান্ডরা তাদের জন্য কনটেন্ট রাইটার খুঁজে এবং কাজ দিলে লেখার পর আপনি অর্থ পাবেন। বিশেষ করে যারা কনটেন্ট মার্কেটিং বা ব্লগ রাইটিংয়ে দক্ষ, তাদের জন্য এটি একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম।
৯. Prolific – একাডেমিক রিসার্চ সার্ভে করে আয়
Prolific হলো একটি অনলাইন সার্ভে প্ল্যাটফর্ম, তবে এটি সাধারণ সার্ভের থেকে আলাদা। এখানে একাডেমিক রিসার্চ ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা সম্পর্কিত সার্ভে করতে হয়। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান Prolific এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্ন করে থাকে।
আপনি একাউন্ট খুলে সহজ প্রশ্নের উত্তর দিলে ডলার ইনকাম করতে পারবেন। Prolific এর বিশেষত্ব হলো এটি অন্য সার্ভে সাইটের তুলনায় বেশি নির্ভরযোগ্য ও উচ্চ রেট প্রদান করে।
১০. Honeygain – অব্যবহৃত ইন্টারনেট শেয়ার করে প্যাসিভ ইনকাম
Honeygain হলো একটি প্যাসিভ ইনকাম অ্যাপ, যেখানে আপনাকে কোনো কাজ করতে হয় না। শুধু আপনার ইন্টারনেট সংযোগ শেয়ার করতে হয়। Honeygain আপনার অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে তাদের নেটওয়ার্ক চালায়, আর এর বিনিময়ে আপনাকে ডলার প্রদান করে।
অর্থাৎ, মোবাইল বা কম্পিউটার চালু থাকলেই ধীরে ধীরে আয় জমতে থাকে। যদিও আয় তুলনামূলক কম, তবে একবার সেটআপ করলে প্রতিদিন সামান্য হলেও ইনকাম হয়।
১১. Wynter – মার্কেটিং কনটেন্টে ফিডব্যাক দিয়ে আয়
Wynter হলো একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের মার্কেটিং কনটেন্ট, ওয়েবসাইট বা বিজ্ঞাপন টেস্ট করার জন্য সাধারণ মানুষের মতামত নেয়। আপনি Wynter এ একাউন্ট খুলে সহজভাবে ফিডব্যাক দিতে পারবেন। এখানে বড় কোনো কাজ নেই।
শুধু আপনার মতামত জানাতে হবে। এর বিনিময়ে আপনি নির্দিষ্ট অংকের টাকা পাবেন। এটি খুব বেশি সময় নেয় না এবং খালি সময়ে ইনকাম করার জন্য উপযুক্ত।
১২. Cambly – অনলাইনে ইংরেজি শেখানো (ডিগ্রি ছাড়াই)
Cambly হলো একটি অনলাইন টিউটরিং প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আপনি সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শেখাতে পারবেন। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এখানে কোনো ডিগ্রি বা টিচিং সার্টিফিকেট লাগে না। শুধু ইংরেজি ভালো বলতে পারলেই হবে।
শিক্ষার্থীরা সাধারণত কথোপকথন অনুশীলন করতে চায়, আর আপনি তাদের সাথে ভিডিও কলে কথা বলে প্রতি ঘণ্টায় ডলার আয় করতে পারবেন। বাংলাদেশ থেকেও সহজেই Cambly তে আবেদন করা যায় এবং এটি অনেক জনপ্রিয় একটি ইনকাম সোর্স।
১৩. Skillshare – নিজের কোর্স তৈরি করে আয়
Skillshare হলো একটি অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, যেখানে শিক্ষকরা কোর্স তৈরি করে আপলোড করেন এবং শিক্ষার্থীরা সেই কোর্স থেকে শিখে। আপনি যদি কোনো স্কিল জানেন (যেমন ডিজাইন, অ্যানিমেশন, প্রোগ্রামিং, মার্কেটিং, মিউজিক বা ফটোগ্রাফি),
তাহলে Skillshare এ কোর্স তৈরি করে লাখো শিক্ষার্থীর কাছে বিক্রি করতে পারবেন। এখানে ইনকাম হয় রয়্যালটি সিস্টেমে, অর্থাৎ যত বেশি শিক্ষার্থী আপনার কোর্স দেখবে, আপনি তত বেশি টাকা পাবেন।
১৪. Swappa – পুরনো টেক প্রোডাক্ট বিক্রি করে আয়
Swappa হলো একটি নিরাপদ মার্কেটপ্লেস যেখানে মানুষ ব্যবহৃত টেক প্রোডাক্ট যেমন মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, ক্যামেরা ইত্যাদি কেনাবেচা করে। আপনি যদি পুরনো ডিভাইস বিক্রি করতে চান, তাহলে Swappa তে একাউন্ট খুলে সেগুলো লিস্ট করতে পারেন।
এর সুবিধা হলো এটি eBay এর মতো ঝুঁকিপূর্ণ নয়, বরং নিরাপদে টাকা লেনদেন হয় এবং আপনার পুরনো জিনিস বিক্রি করে ভালো আয় করা সম্ভব।
১৫. JustAnswer – বিশেষজ্ঞ জ্ঞান দিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আয়
JustAnswer হলো একটি বিশেষায়িত প্ল্যাটফর্ম যেখানে ব্যবহারকারীরা আইন, টেক, মেডিকেল, ফাইন্যান্স, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন করে। আপনি যদি কোনো ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হন, তাহলে এখানে একাউন্ট খুলে মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আয় করতে পারবেন।
এটি মূলত পেশাদারদের জন্য, কারণ এখানে নির্ভরযোগ্য উত্তর দিতে হয়। তবে একবার এক্সপার্ট হিসেবে সিলেক্ট হলে আপনি প্রতি মাসে ভালো অংকের ডলার আয় করতে পারবেন।
১৬. Fiverr – স্কিল বিক্রি করে অনলাইনে ইনকাম
Fiverr হলো একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস যেখানে আপনি আপনার যেকোনো স্কিলকে গিগ আকারে বিক্রি করতে পারবেন। এখানে আপনাকে ক্লায়েন্ট খুঁজতে হয় না, বরং আপনি নিজের প্রোফাইল তৈরি করে পরিষেবাগুলো
(যেমন: লোগো ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ভয়েস ওভার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি) “গিগ” হিসেবে লিস্ট করবেন। যখনই কোনো ক্রেতা আপনার গিগ পছন্দ করবে, তখন সে সরাসরি অর্ডার দেবে এবং কাজ শেষে Fiverr আপনাকে ডলার আকারে পেমেন্ট দেবে।
Fiverr এর বড় সুবিধা হলো শুরুর দিকের ফ্রিল্যান্সারদের জন্যও এটি সহজে কাজ পাওয়ার একটি সুযোগ, কারণ এখানে ছোট কাজও পাওয়া যায় (যেমন ৫ ডলারের কাজ থেকে শুরু)।
১৭. PeoplePerHour – প্রজেক্ট ভিত্তিক ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস
PeoplePerHour হলো একটি আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা ঘণ্টা ভিত্তিক বা প্রজেক্ট ভিত্তিক কাজ করে আয় করতে পারেন।
এখানে আপনি একটি প্রফেশনাল প্রোফাইল তৈরি করে নিজের স্কিল অনুযায়ী কাজের ক্যাটেগরি বেছে নিতে পারবেন। ক্লায়েন্টরা তাদের কাজ পোস্ট করে এবং আপনি সেগুলোর জন্য প্রপোজাল পাঠাতে পারবেন।
অন্যদিকে চাইলে নিজের সার্ভিস “Hourlie” আকারে লিস্ট করে রাখতে পারবেন, যাতে ক্রেতারা সরাসরি কিনতে পারে। গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, SEO, মার্কেটিংসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখানে প্রচুর কাজ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ অনলাইনে কাজ করে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায়
১৮. Toptal – শীর্ষ লেভেলের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য
Toptal হলো একটি প্রিমিয়াম ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্ম, যেখানে শুধুমাত্র বিশ্বের সেরা ৩% ফ্রিল্যান্সার কাজ করার সুযোগ পান। এখানে কাজ করতে চাইলে আপনাকে কঠিন ভেরিফিকেশন ও স্কিল টেস্ট দিতে হয়।
যদি আপনি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডিজাইন, ফাইন্যান্স, প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট বা কনসালটেন্সিতে দক্ষ হন, তাহলে Toptal আপনার জন্য সেরা জায়গা হতে পারে।
কাজের রেট অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের তুলনায় অনেক বেশি, কারণ এখানে ক্লায়েন্টরা সাধারণত বড় কোম্পানি বা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড হয়।
১৯. Freelancer.com – পুরনো এবং জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস
Freelancer.com হলো সবচেয়ে পুরনো এবং জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মগুলোর একটি। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার প্রোজেক্ট পোস্ট হয়, যা বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে ভাগ করা থাকে। আপনি একাউন্ট খুলে প্রোফাইল তৈরি করে ক্লায়েন্টদের পোস্ট করা কাজের জন্য বিড করতে পারবেন।
এই প্ল্যাটফর্মে প্রতিযোগিতা বেশি হলেও নতুনদের জন্য কাজ শেখা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের ভালো সুযোগ রয়েছে। Freelancer.com এ ছোট বড় সব ধরনের কাজ পাওয়া যায়। ডেটা এন্ট্রি থেকে শুরু করে জটিল প্রোগ্রামিং পর্যন্ত।
২০. Guru – দীর্ঘমেয়াদি কাজের জন্য নির্ভরযোগ্য ফ্রিল্যান্স সাইট
Guru হলো একটি ফ্রিল্যান্স সাইট যেখানে ক্লায়েন্টরা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি প্রোজেক্ট পোস্ট করে। এর মানে, এখানে অনেক সময় আপনি মাসিক বা চুক্তিভিত্তিক কাজ পাবেন। Guru তে “Work Room” নামের একটি বিশেষ ফিচার আছে, যেখানে ক্লায়েন্ট এবং ফ্রিল্যান্সাররা নিরাপদে কাজের অগ্রগতি ট্র্যাক করতে পারে।
এই প্ল্যাটফর্মে প্রোগ্রামিং, লেখা, ডিজাইন, মার্কেটিং, সাপোর্ট সার্ভিসসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ পাওয়া যায়। যারা স্থায়ী ক্লায়েন্ট খুঁজছেন তাদের জন্য এটি একটি ভালো অপশন।
২১. 99designs – ডিজাইনারদের জন্য প্রিমিয়াম মার্কেটপ্লেস
99designs হলো বিশেষভাবে গ্রাফিক ডিজাইনারদের জন্য তৈরি একটি প্ল্যাটফর্ম। এখানে ক্লায়েন্টরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ডিজাইন কনটেস্ট চালু করে এবং বিশ্বজুড়ে ডিজাইনাররা সেই কনটেস্টে অংশ নেয়।
বিজয়ী ডিজাইন নির্বাচিত হলে আপনি ডলার পাবেন। এছাড়া চাইলে ক্লায়েন্টদের সাথে সরাসরি কাজ করার সুযোগও থাকে। লোগো ডিজাইন, ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি, ওয়েব ডিজাইন, টি-শার্ট ডিজাইন ইত্যাদি ক্ষেত্রে দক্ষদের জন্য এটি অন্যতম সেরা আয়ের প্ল্যাটফর্ম।
২২. DesignCrowd – ক্রিয়েটিভ কাজের জন্য গ্লোবাল মার্কেটপ্লেস
DesignCrowd হলো আরেকটি জনপ্রিয় ডিজাইন-ভিত্তিক ফ্রিল্যান্স সাইট, যেখানে লোগো, পোস্টার, ওয়েবসাইট, বিজনেস কার্ড এবং অন্যান্য গ্রাফিক ডিজাইন সম্পর্কিত কাজ পাওয়া যায়। ক্লায়েন্টরা এখানে প্রোজেক্ট পোস্ট করে এবং আপনি সেই প্রোজেক্টে অংশ নিতে পারেন।
ডিজাইন সিলেক্ট হলে আপনি টাকা পাবেন। এটি নতুন ডিজাইনারদের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জন এবং পোর্টফোলিও তৈরিরও ভালো জায়গা।
২৩. Envato Studio – ক্রিয়েটিভ ও টেকনিক্যাল সার্ভিস মার্কেটপ্লেস
Envato Studio হলো Envato Market এর একটি বিশেষ অংশ, যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের ক্রিয়েটিভ ও টেকনিক্যাল সার্ভিস বিক্রি করতে পারেন। এখানে সাধারণত ওয়েব ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং,
ভয়েস ওভার, SEO এবং ডিজিটাল মার্কেটিং কাজ বেশি পাওয়া যায়। এই প্ল্যাটফর্মের বিশেষত্ব হলো এখানে ক্লায়েন্টরা মানসম্মত কাজের জন্য ভালো পারিশ্রমিক দিতে প্রস্তুত থাকে।
২৪. Microworkers – ছোট কাজ করে দ্রুত ইনকাম
Microworkers হলো একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে খুব ছোট ছোট কাজ করে দ্রুত টাকা আয় করা যায়। কাজগুলো সাধারণত সহজ হয় যেমন: ওয়েবসাইট ভিজিট করা, ভিডিও দেখা, অ্যাপ টেস্ট করা, সার্ভে করা, ফর্ম পূরণ করা ইত্যাদি।
প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা পারিশ্রমিক পাওয়া যায়, এবং অনেক কাজ থাকায় খালি সময়ে সামান্য ইনকাম করার জন্য এটি বেশ জনপ্রিয়।
২৫. Clickworker – মাইক্রো টাস্ক প্ল্যাটফর্ম
Clickworker হলো একটি মাইক্রো টাস্ক সাইট, যেখানে ডেটা এন্ট্রি, রিসার্চ, ক্যাটাগরাইজেশন, প্রুফরিডিং, সার্ভে এবং ছোট ছোট অনলাইন টাস্ক সম্পন্ন করে আয় করা যায়।
এখানে একাউন্ট খুলে কাজ শুরু করা সহজ এবং প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা সময় দিলেই নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ইনকাম সম্ভব। বিশেষ করে যারা পার্ট-টাইম ইনকাম খুঁজছেন, তাদের জন্য এটি একটি ভালো অপশন।
২৬. Amazon Mechanical Turk (MTurk) – মাইক্রো টাস্ক করে আয়
Amazon Mechanical Turk বা সংক্ষেপে MTurk হলো অ্যামাজনের তৈরি একটি মাইক্রো টাস্ক প্ল্যাটফর্ম। এখানে ছোট ছোট কাজ দেওয়া হয় যেমন: ডেটা এন্ট্রি, ছবি ট্যাগ করা, সার্ভে পূরণ, কনটেন্ট ভেরিফিকেশন ইত্যাদি।
প্রতিটি কাজের জন্য ছোট অংকের টাকা দেওয়া হলেও কাজের সংখ্যা বেশি থাকায় খালি সময়ে ভালো ইনকাম করা যায়। Amazon এর মতো বড় কোম্পানির প্ল্যাটফর্ম হওয়ায় এটি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য।
২৭. Appen – ডেটা ও এআই প্রোজেক্টে কাজ
Appen হলো একটি গ্লোবাল কোম্পানি, যারা মূলত এআই ট্রেনিং, ডেটা অ্যানোটেশন ও স্পিচ রিকগনিশন প্রোজেক্টে ফ্রিল্যান্সারদের কাজ দেয়। এখানে আপনি ঘরে বসেই ডেটা লেবেলিং, ভয়েস রেকর্ডিং, ইমেজ অ্যানোটেশন, টেক্সট রিভিউ ইত্যাদি কাজ করতে পারবেন।
Appen এর সবচেয়ে ভালো দিক হলো অনেক সময় এখানে দীর্ঘমেয়াদি কাজ পাওয়া যায়, ফলে নিয়মিত ইনকাম সম্ভব হয়।
২৮. Rev – ট্রান্সক্রিপশন, ক্যাপশনিং ও সাবটাইটেল কাজ
Rev হলো একটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম যেখানে অডিও বা ভিডিও শুনে টেক্সটে রূপান্তর (Transcription) করতে হয়। এছাড়া ভিডিওতে ক্যাপশন ও সাবটাইটেল যোগ করার কাজও পাওয়া যায়।
যাদের ইংরেজি শোনার ও টাইপ করার দক্ষতা ভালো, তাদের জন্য Rev থেকে ভালো ইনকাম করা সম্ভব। কাজ শেষ হলে Rev সরাসরি PayPal এ পেমেন্ট পাঠায়।
২৯. TranscribeMe – ট্রান্সক্রিপশন ভিত্তিক ইনকাম
TranscribeMe হলো Rev এর মতোই একটি ট্রান্সক্রিপশন সাইট, যেখানে অডিও ফাইলকে টেক্সটে রূপান্তর করার কাজ দেওয়া হয়। এখানে তুলনামূলক ছোট ছোট অডিও ফাইল থাকে, ফলে নতুনরাও সহজে কাজ শুরু করতে পারে।
TranscribeMe নতুনদের জন্য বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি ভালো ইনকাম করাও সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ সেরা ৪২টি অ্যাড দেখে টাকা ইনকাম করার অ্যাপস
FAQ:
১. একাউন্ট খুলে অনলাইনে টাকা ইনকাম করার সাইটগুলো কি আসলেই বিশ্বস্ত?
হ্যাঁ, তবে সব সাইট সমানভাবে নির্ভরযোগ্য নয়। Fiverr, Upwork, Etsy, Shutterstock, Amazon Associates এর মতো প্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্মগুলো দীর্ঘদিন ধরে লাখো মানুষ ব্যবহার করছে এবং নিয়মিত পেমেন্ট দিয়ে আসছে। তবে নতুন বা অপরিচিত সাইট বেছে নেওয়ার আগে অবশ্যই রিভিউ চেক করতে হবে।
২. বাংলাদেশ থেকে কি এসব ওয়েবসাইটে কাজ করা সম্ভব?
অবশ্যই সম্ভব। বাংলাদেশ থেকে হাজারো ফ্রিল্যান্সার Fiverr, Upwork, PeoplePerHour, ClickWorker, Shutterstock ইত্যাদিতে কাজ করছেন।
শুধু আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে হলে ইংরেজিতে যোগাযোগ, Payoneer/PayPal (বা Bkash সমর্থিত প্ল্যাটফর্ম) ব্যবহার করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
৩. এই সাইটগুলোতে কাজ শুরু করতে কোনো ইনভেস্টমেন্ট লাগে কি?
না, বেশিরভাগ সাইট সম্পূর্ণ ফ্রি। যেমন: Fiverr, Upwork, ClickWorker, Creative Fabrica, Teespring ইত্যাদি। তবে Etsy এর মতো কিছু প্ল্যাটফর্মে দোকান খোলার সময় ছোট খরচ (listing fee) থাকতে পারে।
৪. টাকা কিভাবে পাবো?
সাইট ভেদে ভিন্ন পেমেন্ট মেথড থাকে। সাধারণত Payoneer, PayPal, Wise, Skrill, এমনকি সরাসরি Bank Transfer ও ব্যবহার করা যায়।
বাংলাদেশে PayPal না থাকলেও Payoneer ও Wise খুবই জনপ্রিয়। অনেক প্ল্যাটফর্ম বর্তমানে Bkash, Nagad বা Rocket সমর্থন করছে।
৫. নতুনদের জন্য কোন সাইট সবচেয়ে সহজ?
নতুনদের জন্য Fiverr, ClickWorker, TaskRabbit (যেখানে এভেইলেবল), এবং Teespring খুব সহজ। এখানে বিশেষ কোনো বড় স্কিল ছাড়া ছোট ছোট কাজ, ডিজাইন বা টাস্ক করেও ইনকাম করা যায়। তবে দীর্ঘমেয়াদে বড় ইনকামের জন্য Upwork, Shutterstock বা Amazon Associates বেশি লাভজনক।
৬. দিনে কত টাকা ইনকাম করা যায়?
- এটা নির্ভর করে আপনার স্কিল, সময় এবং প্ল্যাটফর্মের কাজের ধরন অনুযায়ী।
- Fiverr/Upwork এ ভালো স্কিল থাকলে দিনে $২০-$১০০+ আয় সম্ভব।
- ClickWorker এর মতো মাইক্রো টাস্ক সাইটে দিনে $৫-$২০।
- Etsy/Printify/Teespring এ প্রোডাক্ট জনপ্রিয় হলে দিনে $৫০-$২০০ পর্যন্ত প্যাসিভ ইনকাম সম্ভব।
৭. এগুলো কি মোবাইল থেকে করা যায়?
হ্যাঁ, Fiverr, Upwork, Etsy, Shutterstock, ClickWorker সবগুলোর মোবাইল অ্যাপ রয়েছে। তাই মোবাইল দিয়েই সহজে একাউন্ট খোলা, কাজ করা এবং টাকা উত্তোলন করা যায়। তবে কিছু কাজের জন্য (যেমন: গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং) কম্পিউটার বেশি সুবিধাজনক।